কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন, ভিডিও ভাইরাল: তদন্তে নেমেছে পুলিশ
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামে এক হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটেছে। ধর্ষণের অভিযোগ তুলে এক নারীকে ঘরের মধ্যে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় কয়েকজন যুবকের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার (২৬ জুন) দিবাগত রাতে ঘটে যাওয়া এই ঘটনার একটি ৫১ সেকেন্ডের ভিডিও শনিবার রাতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
ভিডিওটিতে দেখা যায়, অন্তত ১০-১২ জন যুবক এক নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করছে। নারীটি প্রাণপণে সাহায্য চাইলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। বিষয়টি ভিডিও ভাইরাল হওয়ার আগপর্যন্ত স্থানীয় প্রশাসন বা পুলিশকে জানানো হয়নি বলে জানিয়েছে পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, নির্যাতিত ২৫ বছর বয়সী ওই নারী শুক্রবার মুরাদনগর থানায় ধর্ষণের অভিযোগে একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় বাহেরচর গ্রামের শহীদ মিয়ার ছেলে ফজর আলী (৩৮) কে অভিযুক্ত করা হয়েছে। ঘটনার পর থেকেই অভিযুক্ত ব্যক্তি পলাতক রয়েছেন এবং তাকে গ্রেফতারে পুলিশের দুটি টিম মাঠে অভিযান চালাচ্ছে।
ভুক্তভোগী নারী জানান, ঘটনার রাতে তার বাবা-মা বাড়িতে ছিলেন না। সেই সুযোগে অভিযুক্ত ফজর আলী তাকে দরজা খুলতে বলেন। তিনি দরজা না খুললে ফজর আলী কৌশলে ঘরে ঢুকে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। তার চিৎকারে প্রতিবেশীরা এসে ফজর আলীকে মারধর করে এবং ঘটনার ভিডিও ধারণ করে। এরপর ওই নারীকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ভুক্তভোগী নারীর সঙ্গে অভিযুক্তের পূর্বপরিচয় ছিল, যা গড়ে ওঠে পারস্পরিক আর্থিক লেনদেনের সূত্র ধরে। ভুক্তভোগীর স্বামী প্রবাসে থাকেন এবং তার দুটি সন্তান রয়েছে।
ঘটনার রাজনৈতিক রঙও পেয়েছে। কেউ কেউ ধর্ষককে বিএনপির কর্মী দাবি করলেও, দলের স্থানীয় নেতারা বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। অন্যদিকে, সামাজিক মাধ্যমে তার আওয়ামী লীগের মিছিলে অংশগ্রহণের একাধিক ছবি ভাইরাল হয়েছে, যা নিয়েও শুরু হয়েছে বিতর্ক।
মুরাদনগর থানার ওসি জাহিদুর রহমান জানান, ভুক্তভোগীর মেডিকেল পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। অভিযুক্তকে দ্রুত গ্রেফতারের লক্ষ্যে অভিযান চলছে। সেই সঙ্গে, ওই নারীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন ও ভিডিও ধারণ এবং ছড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। ভিডিও ছড়ানো একটি দণ্ডনীয় অপরাধ বলেও জানান তিনি।
পুলিশ বলছে, নির্যাতনের ঘটনা শুধু ধর্ষণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং তা সামাজিকভাবে একজন নারীর মর্যাদাকে চরমভাবে হুমকির মুখে ফেলেছে। এই ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করে জড়িত সবাইকে বিচারের মুখোমুখি করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে প্রশাসন।