ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই উত্তেজনা ছড়াচ্ছে ক্যাম্পাসজুড়ে। প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি, পাল্টাপাল্টি অভিযোগ আর প্রচারণায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা রীতিমতো সরগরম।
গতকাল শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) জুমার নামাজের পর থেকে রাত পর্যন্ত ক্যাম্পাসজুড়ে সংবাদ সম্মেলন, গণসংযোগ ও প্রচারণা কর্মসূচি চলতে থাকে।
জিএস পদে সমর্থন পরিবর্তন
এদিন দুপুরে আলোচনার জন্ম দেন স্বতন্ত্র ‘ডিইউ ফার্স্ট’ প্যানেলের জিএস প্রার্থী মাহিন সরকার। তিনি মধুর ক্যান্টিনের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন যে তিনি প্রতিদ্বন্দ্বিতা থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এবং বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ (বাগছাস)-এর মনোনীত জিএস প্রার্থী আবু বাকের মজুমদারকে সমর্থন করছেন।
মাহিন বলেন, “গণঅভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতৃত্ব ডাকসুতে এলে তারা শিক্ষার্থীদের প্রতি আরও দায়বদ্ধ হবে।”
আবু বাকের এ সময় কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, এই ঐক্য শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আরও শক্তিশালী আন্দোলনের পথ তৈরি করবে।
অভিযোগ ও পাল্টা অভিযোগ
‘বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থী’ প্যানেলের ভিপি প্রার্থী আব্দুল কাদের অভিযোগ করেন, ৫ আগস্টের পর থেকে তিনি অনলাইনে অশালীন আক্রমণের শিকার হচ্ছেন, যা তাকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করেছে।
অন্যদিকে ছাত্রদল সমর্থিত জিএস প্রার্থী শেখ তানভীর বারী হামিম অভিযোগ তোলেন, বাগছাস আসলে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ছায়াতলে পরিচালিত হচ্ছে, যা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা।
প্রার্থীদের প্রতিশ্রুতি
ভিপি প্রার্থী আবিদুল ইসলাম খান (ছাত্রদল সমর্থিত) প্রতিশ্রুতি দেন, নির্বাচিত হলে ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবেন।
ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোটের ভিপি প্রার্থী আবু সাদিক কায়েম জানান, হলে সিট না পাওয়া নারী শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা আবাসনের ব্যবস্থা করবেন।
স্বতন্ত্র প্রার্থী উমামা ফাতেমা বলেন, বড় দল মানেই দখলদারিত্ব এবং প্রকৃত উন্নয়নের পরিবর্তে কেবল বাহ্যিক ওয়েলফেয়ার পলিটিক্স।
বামপন্থি প্যানেলের ভিপি প্রার্থী নাইম হাসান হৃদয় সতর্ক করে বলেন, একাত্তরবিরোধী কোনো প্রার্থী নির্বাচিত হলে তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য কলঙ্ক বয়ে আনবে।
আবু বাকেরকে ঘিরে বিতর্ক
এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে আবু বাকের মজুমদারের ২০২২ সালে ছাত্রলীগ আয়োজিত এক কর্মশালার ছবি। যদিও তার সমর্থকরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন, তিনি ২০২৪ সালের জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনের সারির নেতৃত্ব দিয়েছেন।
সব মিলিয়ে ডাকসু নির্বাচন ঘিরে উত্তেজনা চরমে পৌঁছেছে। শিক্ষার্থীরা বলছেন, এই নির্বাচন কেবল ক্ষমতার প্রতিযোগিতা নয়; বরং গণঅভ্যুত্থান-পরবর্তী প্রেক্ষাপটে বিশ্ববিদ্যালয় রাজনীতির নতুন ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে।
👉 আগামী ৯ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে ডাকসু নির্বাচন।